ভবন ভাঙ্গার নোটিশ দিলেই রাজউকের বিরুদ্ধে মামলা করছে মালিকরা

শফিকুল ইসলাম

রাজধানী ঢাকায় অবৈধ ভবনসহ নানা স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ হচ্ছে না। এসব ভবন ও স্থাপনা নির্মাণের আগে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) থেকে অনুমোদন নেয়া হলেও অনেকক্ষেত্রে তার সঠিক নিয়ম মানা হয় না। এসবের বিরুদ্ধে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নিতে গেলে সংশ্লিষ্ট মালিকরা কোর্টে মামলা করে তা স্থগিত করে দিচ্ছে। তবে এবার যাতে তারা এমনটা করতে না পারে সে জন্য রাজউক নয়া কৌশল গ্রহণ করেছে।

রাজউক সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর অনুমোদনহীন ভবন-স্থাপনা ভাঙতে এবার রাজউক নতুন কৌশল গ্রহণ করেছে। এ কৌশল নিলে রাজধানীর ঝুকিপূর্ণ ভবন অনেকটাই কমে আসবে বলে মনে করছেন কর্তৃপক্ষ। ভবন ভাঙ্গতে নোটিশ দেয়ার পরই মালিকরা আদালতে মামলা করে ভবনের ওপর স্থগিতাদেশ নিয়ে ভাঙ্গার কাজ বন্ধ করে দেয়। মালিকরা যাতে এই সুযোগ নিতে না পারেন, এ জন্য ভবন ভাঙ্গার নোটিশ জারির দু’একদিনের মধ্যেই রাজউকের টিম ভবন ভাঙার কাজ শুরু করবে। এর ফলে ভবন মালিকরা আর বাধা দেয়ার কোন সুযোগ পাবে না। এখন থেকে রাজউক এ কৌশল গ্রহণ করবে।

রাজউকের সংশ্লিষ্ট বিভাগ জানায়, ইমারত নির্মাণ বিধিমালা-২০০৮ অনুযায়ী কোন ভবন রাজউক অনুমোদিত নকশার ব্যতিক্রম ঘটিয়ে নির্মিত হলে তা যদি কোন ধরনের দুর্ঘটনার কারণ না হয় তাহলে প্রয়োজনীয় সংশোধন বা জরিমানা দিয়ে ভবনটিকে বৈধ করা যায়। এ ধরনের বেশকিছু ভবন সংশোধনের আবেদন রাজউকের কাছে রয়েছে। ফলে সংশোধনযোগ্য কোন ভবন এখন পর্যন্ত উচ্ছেদ করা হয়নি। আর যেসব ভবন সংশোধন করা সম্ভব হচ্ছে না সেসব ভবনই ভাঙ্গার উদ্যোগ নেয়া হলে মালিকরা মামলা করে ভবন ভাঙ্গার কাজ ঝুলিয়ে দেয়। এতে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সংখ্যা বাড়ছে। ফলে ভবন মালিকরা যাতে আর মামলা দিয়ে ভবন ভাঙ্গার কাজ বন্ধ করতে না পারে সে জন্য এখন থেকে নোটিশ জারির পরদিনই রাজউকের টিম ভবন ভাঙার কাজ শুরু করবে।

রাজউক সূত্রে জানা গেছে, গত বছর মাসে রাজউক ৩ হাজার ৯৮৮ টি ঝুঁকিপূর্ণ ও অবৈধ ভবন চিহ্নিত করে। এসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের ব্যাপারে তখন চ‚ড়ান্ত নোটিশ দেয়া হলেও মালিকরা আলাদতে মামলা করে তা ভাঙ্গার কাজ ঠেকিয়ে দেয়। ফলে এখন পর্যন্ত এসব ভবন ভাঙ্গতে ও সংশ্লিষ্ট ভবন মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেনি রাজউক। এর মধ্যে উল্লেখ যোগ্য ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকায় রয়েছে, গুলশানের ১৩৫ নম্বর সড়কের জাব্বার টাওয়ার, গুলশান এভিনিউয়ে প্রিমিয়ার স্কয়ার ভবন, গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেল, বেগুনবাড়ী খালের উপর বিজিএমইএ ভবন, ইস্কাটনের ২২ তলা বোরাক ভবন, গুলশানের ইকবাল সেন্টার, ও মহাখালীর ২০ তলা ব্রাক সেন্টার। রাজউকের চেয়ারম্যান এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী বলেন, আমরা চেষ্টা করছি সব অবৈধ ভবন উচ্ছেদ করতে।

কিন্তু নানা জটিলতায় তা সফল হচ্ছে না। তিনি বলেন, অনুমোদনহীন ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা তৈরির জন্য চারজন অথরাইজড অফিসারকে দিয়ে চারটি টিম গঠন করা হয়েছে। এই টিম ইতিমধ্যে ২২টি অনুমোদনহীন অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করেছে। শিগগিরই এসব ভবন অপসারণের কাজ শুরু করা হবে। এ অভিযান আরো ত্বরান্বিত করা হবে। তিনি আরো বলেন, ভবন মালিকরা যাতে আদালতের স্থগিতাদেশ জারির সুযোগ না পায়, সে জন্য নোটিশ ইস্যুর পর দিনই ভবন ভাঙার কাজ শুরু করবে রাজউক। এতে নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ধীরে ধীরে কমে আসবে।

সবারবাংলা/এসআই

Facebook Comments Box