মাঘের মাঝামাঝি সময়ে উত্তর জনপদে জেঁকে বসেছে শীত। ঘন কুয়াশা না থাকলেও হিমেল হাওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। শীতের তীব্রতায় জরুরি কাজ ছাড়া বাইরে বের হচ্ছেন না মানুষজন। হিমালয়ের বরফ বাতাসে কাহিল হয়ে পড়েছে মানুষসহ পশুপাখি। রাতে বৃষ্টির মতো ঝড়ছে কুয়াশা।
শুক্রবার (২৮ জানুয়ারি) সকালে রংপুরে ৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং কুড়িগ্রামে দেশের সর্বনিম্ন ৬ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। গত পাঁচ বছরের মধ্যে রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলে এটি সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
এদিকে শীতে তীব্রতায় জনজীবনে আরও বেশি আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে ঠাণ্ডাজনিত নানা উপসর্গ। গত এক মাসে রংপুর জেলায় শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে শিশু-বৃদ্ধসহ ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।সরকারি ও বেসরকারি ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় ‘অপ্রতুল’ বলেও দাবি করছেন অনেকে।
গত কয়েকদিন ধরে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এবং বিকেল ৪টার পর থেকে রাতভর ঘন কুয়াশা ঝরছে এ অঞ্চলে। রাত যতই গভীর হয়, কুয়াশার মাত্রাও ততই বাড়তে থাকে। বৃষ্টির মতো কুয়াশা ঝরতে থাকায় রাস্তায় যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে মারাত্মকভাবে। বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা, ঘটছে প্রাণহানিও।
শীতে খেটে খাওয়া মানুষরা চরম বিপদে পড়েছেন। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ঘন কুয়াশার সঙ্গে হিমেল বাতাসে মানুষ সাধারণ কাজকর্ম করতে পারছে না। রংপুর নগরীতেও রিকশা-ভ্যান চালকরা বিপাকে পড়েছেন। শিশু-বৃদ্ধরা ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। দিনভর ঘরের মধ্যে গায়ে কাঁথা-কম্বল জড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। আবার অনেকেই খড়কুটো জালিয়ে উষ্ণতা নিচ্ছেন।
রংপুর নগরীর সাতমাথা এলাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিয়ে বের হয়েছেন মতিয়ার রহমান। তিনি বলেন, কয় দিনের চায়া আইজ খুব ঠান্ডা নাগোচে বাহে। ঠান্ডায় ঠিকমতো গাড়ি চালাও যাওছে না। হামরা গরিব মানুষ গাড়ি চালবার না পারলে খামো কি।
কাউনিয়া উপজেলার মধুপুর চরের আলতাব হোসেন বলেন, অভাবের কারণে ঠাণ্ডা নিবারণের গরম কাপড় কিনতে পারিনি। যা ছিল তাই দিয়ে চলছিল। কিন্তু কাল থেকে আর চলছে না। তাই বিকালের পর পরই ঘরে ঢুকতে হচ্ছে।
পীরগাছা উপজেলার রহমতের চরের বাসিন্দা মজিবার রহমান জানান, এবার তেমন কুয়াশা নেই। হিমেল বাতাসে বিকাল থেকে ঘরের বাইরে বের হওয়া যাচ্ছে না।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা মোস্তাফিজার রহমান জানান, গত কয়েক দিন থেকে রংপুরে তাপমাত্রা ৮ থেকে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করছে। তবে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। এমন অবস্থা আরও দুই-তিনদিন অব্যাগত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
সবারবাংলা/এসআই