শুক্রবারের মধ্যে দাবি মানার আল্টিমেটাম, না হলে মহাসমাবেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

শুক্রবারের মধ্যে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারি এবং অবিলম্বে গণভোটের বিষয়ে সিদ্ধান্তসহ পাঁচ দফা দাবি না মানলে আগামী মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) ঢাকায় মহাসমাবেশ করা হবে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সমমনা আটটি দলের নেতারা। পাঁচ দফা দাবি আদায়ে বৃহস্পতিবার রাজধানীর মৎস্য ভবনের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তারা এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। এর আগে পাঁচ দফা দাবিতে প্রধান উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি দেন আটটি রাজনৈতিক দলের নেতারা। এসব দলের মধ্যে রয়েছে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি। তাদের দাবির মধ্যে রয়েছে: জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি এবং ওই আদেশের ওপর নভেম্বরের মধ্যেই গণভোট আয়োজন করা; আগামী জাতীয় নির্বাচনে উভয় কক্ষে বা উচ্চকক্ষে পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতি চালু করা; অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার জন্য সমান সুযোগ) নিশ্চিত করা; ‘ফ্যাসিস্ট’ সরকারের সব জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা এবং ‘স্বৈরাচারের দোসর’ জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা

জাতি আজ ঐক্যবদ্ধ উল্লেখ করে সমাবেশে বক্তারা বলন, জুলাই জাতীয় সনদকে আইনি ভিত্তি দিতে হবে। সংস্কার না করে কোনো নির্বাচন বাংলাদেশের মাটিতে হতে দেওয়া হবে না, হবে না। সুতরাং আগে গণভোট দিতে হবে। তার আগে অনতিবিলম্বে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারি করতে হবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নভেম্বরে গণভোট ও জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারিসহ পাঁচ দফা দাবি মেনে নিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আহ্বান জানিয়ে সমাবেশে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, অন্যথা হলে আগামী ১১ নভেম্বর রাজধানী ঢাকার চিত্র ভিন্ন হবে। মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আপনারা আমাদের পাঁচ দফা দাবি মেনে নিয়ে জুলাই সনদের এই গণআকাঙ্ক্ষার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করুন। তা না হলে ১১ নভেম্বর রাজধানী ঢাকার চিত্র ভিন্ন হবে ইনশাআল্লাহ। খুব দ্রুতই উপদেষ্টা পরিষদ সিদ্ধান্ত নেবেন বলে আমরা আশা করি।

মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আগামী ১১ নভেম্বর এই আটটি রাজনৈতিক দলের উদ্যোগে রাজধানীতে ডাকা মহাসমাবেশের খবর আপনারা পেয়েছেন। এর আগে আমরা আজ সরকারকে বলতে চাই, এই মহাসমাবেশে লক্ষ লক্ষ জনতার পদভারে ঢাকা মুখরিত হওয়ার আগে আপনারা আমাদের দাবি মেনে নিন। প্রত্যেক রাজনৈতিক দলকে লিয়াজোঁ কমিটি গঠনের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ১১ তারিখের সমাবেশ সফল করার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা লিয়াজোঁ কমিটির পক্ষ থেকে যাবে। এর আগে গতকাল স্মারকলিপি প্রদান উপলক্ষ্যে রাজধানীর পল্টন মোড়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের ১১ তারিখ ঢাকায় গণজমায়েতের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এসময় তিনি বলেন, আজকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে স্মারকলিপি দেওয়ার পরও যদি দাবি মানা না হয়, অবস্থার যদি উন্নতি না হয়, তাহলে আগামী ১১ তারিখ ‘চলো চলো ঢাকা চলো’ কর্মসূচি। আগামী ১১ তারিখ ঢাকা মহানগরী হবে জনতার নগরী, দাবি আদায়ের ১১ তারিখ। লড়াই হবে। ‘লড়াই লড়াই চাই, লড়াই করে বাঁচতে চাই’ বলে বক্তব্য শেষ করেন তিনি। তাহের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, আমরা রাজপথে এসেছি, প্রয়োজনে রক্ত দেব, প্রয়োজনে জীবন দেব, কিন্তু আমরা জুলাই বিপ্লবকে ব্যর্থ হতে দেব না। ষড়যন্ত্রকারীদের পরাজয় হবে। জুলাই সনদ বাংলার মাটিতে হুবহু সেটাই আইনি ভিত্তি দিতে সংবিধানে অন্তর্ভূক্ত করা হবে, ইনশাআল্লাহ। তিনি বলেন, আপনারা চালাকি শুরু করেছেন। এই বলবো, সেই বলবো বলে জাতীয় নির্বাচনের সময় ফেব্রুয়ারির কাছাকাছি চলে আসছেন। আমরা আপনাদের চালাকি বুঝি। আপনাদের চালাকির ভিত্তিতেই দাবি আদায়ের পন্থাও আবিষ্কার করা হবে। তিনি বলেন, আমরা এখানো নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় আন্দোলনে আছি। সোজা আঙুলে যদি ঘি না উঠে তাহলে আঙুল বাঁকা করবো। কিন্তু ঘি আমাদের লাগবেই। এসময় উপস্থিত ছিলেন- জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. হামিদুর রহমান আযাদ ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্মমহাসচিব ও ঢাকা উত্তরের সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ, খেলাফত মজসিলের নায়েবে আমির সাখাওয়াত হোসেন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়াজি, নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মুসা বিন ইহজার, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা ইউসুফ সাদিক হাক্কানী, জাগপার মুখপাত্র প্রকৌশলী রাশেদ প্রধান, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল হক।

Facebook Comments Box