বাগেরহাট সদর উপজেলার সিঅ্যান্ডবি বাজার এলাকায় একটি সমবায় সমিতির গ্রাহকদের আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে সমিতির সম্পাদকের বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠানটির নাম মানব উন্নয়ন সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি। এর সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব সরকার টাকা হাতিয়ে নিয়ে পরিবারসহ ভারতে পালিয়ে গেছেন বলে জানাচ্ছেন স্থানীয়রা।
সাধারণ সম্পাদককে খুঁজে না পেয়ে সমিতির সভাপতি মানিক দাসকে টাকার জন্য চাপ দিচ্ছেন গ্রাহকরা। গ্রাহকদের অভিযোগ, তিনিও টাকা আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত।
এ ঘটনায় সিঅ্যান্ডবি বাজারে থাকা মানব উন্নয়ন সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতির অফিস, অঙ্গ প্রতিষ্ঠান শ্রুতি এন্টারপ্রাইজ ও দারুচিনি শপিং সেন্টারে তালা লাগিয়ে দিয়েছেন ক্ষুব্ধ গ্রাহক ও জনপ্রতিনিধিরা।
নিজেকে নির্দোষ দাবি করে সমিতির সভাপতি মানিক দাস বলেন, আমি একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় চাকরি করতাম। যে কারণে সমিতির কোনো বিষয় আমি দেখভাল করতাম না। বিভিন্ন সময় কাগজপত্রে স্বাক্ষর করতাম মাত্র।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৫ সালে সিঅ্যান্ডবি বাজার এলাকার মানিক দাস ও বিপ্লব সরকার স্থানীয় কিছু লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে মানব উন্নয়ন সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। সিঅ্যান্ডবি বাজারের পরিতোষ দাসের ভবনে অফিস নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন তারা। স্থানীয় সহজ-সরল মানুষদের গ্রাহক বানিয়ে দৈনিক, মাসিক ও এক কালীন বিনিয়োগ নেওয়া শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি।
১ লাখ টাকায় মাসে ১৪শ টাকা লাভ দেওয়ার শর্তে সমিতিতে ১৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলাম। এখন কী হবে জানি না। যেকোনো মূল্যে আমরা টাকা ফেরত চাই।
এভাবে স্থানীয়দের কাছ থেকে প্রায় আড়াই কোটি টাকা নেয় তারা। এর মধ্যে ৭০ লাখ টাকা গ্রাহকদের ঋণ দেওয়া আছে। আর শ্রুতি এন্টারপ্রাইজ ও দারুচিনি শপিং সেন্টার নামে সমিতির দুটি প্রতিষ্ঠান আছে। তবে এ দুই প্রতিষ্ঠানের কাছে ওয়ালটনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বেশ কিছু টাকা পাবে।
গত ১৯ এপ্রিল থেকে সমিতির প্রধান নির্বাহী ও সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব সরকার পলাতক রয়েছেন।
বাগেরহাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম আজিজুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি এখনো কেউ আমাদের জানাননি। তবে কেউ যদি অভিযোগ করেন তাহলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ভবন মালিক পরিতোষ দাস বলেন, মানব উন্নয়ন সমবায় সমিতিতে আমার নিজের ১০ লাখ এবং আমার দুই বন্ধুর ৮ লাখ টাকা রয়েছে। আমার ৯ মাসের ভাড়াও পাওনা আছে তাদের কাছে। শুনছি সমিতি পরিচালনার দায়িত্বে থাকা বিপ্লব সরকার বউ-মেয়েকে নিয়ে পালিয়েছে। তাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তার বৃদ্ধ বাবা-মাও ছেলের কোনো খাঁজ দিতে পারছেন না। আমাদের ধারণা, গ্রাহকদের টাকা-পয়সা নিয়ে তিনি ভারতে চলে গেছেন।
কাজী তারেক নামে এক গ্রাহক বলেন, সমিতিতে আমার ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা ছিল। অনেক কষ্ট করে টাকা রেখেছিলাম, কিন্তু সব শেষ হয়ে গেল।
তারেকের মতো জাহিদ হোসেন, সুবর্ণা দাস, বিমল সাহা, মিতা ঘোষ, হাসান আলীসহ স্থানীয় কয়েকশ গ্রাহক টাকা হারিয়ে পথে বসেছেন বলে জানা গেছে।
নিলয় দাস নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, ১ লাখ টাকায় মাসে ১৪শ টাকা লাভ দেওয়ার শর্তে সমিতিতে ১৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলাম। এখন কী হবে জানি না। যেকোনো মূল্যে আমরা টাকা ফেরত চাই।
সমিতির ম্যানেজার ও হিসাব রক্ষক এবং পলাতক বিপ্লবের চাচাতো ভাই অনিক সরকার বলেন, গ্রাহকদের প্রায় আড়াই কোটি টাকা রয়েছে আমাদের কাছে। আর গ্রাহকদের কাছে আমাদের ৭০ লাখ টাকার মতো ঋণ রয়েছে। সমিতি ভালোই চলছিল। এই অবস্থায় কেন সাধারণ সম্পাদক পালিয়ে গেলেন জানি না।
সমিতির ইলেক্ট্রনিক্স বিভাগের পাইকারি সেকশনের দায়িত্বে থাকা কার্তিক সরকার বলেন, ওয়ালটনসহ ৩/৪টি কোম্পানির ফ্রিজ, রাইসকুকার, ফ্যানসহ নানা পণ্য আমরা পাইকারি বিক্রি করতাম। শতাধিক খুচরা ব্যবসায়ীকে মাল দিতাম। সমিতির ম্যানেজার বিপ্লব কুমার সরকার এসব দেখভাল করতেন। সভাপতি মাঝেমধ্যে আসতেন। কিন্তু ১৯ এপ্রিল থেকে তিনি পলাতক। যারা সমিতির কাছে টাকা পাবেন তারা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে এসে শো-রুমে তালা দিয়ে গেছেন। এখন খুচরা বিক্রেতাদের কাছে আমরা যে ৪৬ লাখ টাকা পাব তাও উঠাতে পারছি না। আমার বেতন বন্ধ ২ মাস। এখন কী করব ভেবে পাচ্ছি না।
বিপ্লব সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য মুঠোফোনে বারবার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। সিঅ্যান্ডবি বাজারের পাশে বিপ্লবের বাড়িতে গিয়েও কাউকে পাওয়া যায়নি। তালাবদ্ধ ঘরে বিপ্লবের বাবা-মাও নেই। সপ্তাহখানেক আগে তারা কোথায় যেন চলে গেছেন বলে জানান বিপ্লবের প্রতিবেশীরা।
নিজেকে নির্দোষ দাবি করে সমিতির সভাপতি মানিক দাস বলেন, আমি একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় চাকরি করতাম। যার কারণে সমিতির কোনো বিষয় আমি দেখভাল করতাম না। বিভিন্ন সময় কাগজপত্রে আমি স্বাক্ষর করতাম মাত্র। সব টাকা-পয়সাও ম্যানেজমেন্ট করত বিপ্লব সরকার। গ্রাহকদের কোনো টাকা আমি নিইনি। কোনো গ্রাহক আমার কাছে টাকাও দেননি। বিপ্লবকে ফিরিয়ে এনে গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে আমি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করি।
বাগেরহাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম আজিজুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি এখনো কেউ আমাদের জানাননি। তবে কেউ যদি অভিযোগ করেন তাহলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মুছাব্বেরুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজখবর নিয়ে সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।