ঢাকার নতুন আয়তন হচ্ছে ১৫২৮ বর্গকিলোমিটার

ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) এর পরিকল্পনায় ঢাকার সাথে যুক্ত হচ্ছে ঢাকার পাশের তিন জেলা-নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও কেরানীগঞ্জের কিছু এলাকা। যা যুক্ত হলে ঢাকার নতুন আয়তন হবে ১৫২৮ বর্গকিলোমিটার। শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে আয়োজিত ড্যাপের এক সেমিনারে চূড়ান্ত খসড়ায় এই প্ল্যান তুলে ধরা হয়।

এসময় স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম এমপির সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, সালমান এফ রহমান, মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভি, রাজউক চেয়ারম্যান এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী, নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, প্রকৌশলী মো.নুরুল হুদা, অব: সচিব ড.সুলতান মাহমুদ, স্থপতি ইকবাল হাকিম, খন্দকার রাকিবুর রহমান প্রমূখ।

এসময় স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, রাজধানী ঢাকাকে আর কোনোভাবেই অপরিকল্পিতভাবে গড়ে তুলতে দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন ড্যাপ রিভিউ সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির আহ্বায়ক এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম। একই সাথে ড্যাপ চূড়ান্ত করার পর তা বাস্তবায়নে জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা, নগর পরিকল্পনাবিদ, আবাসন ব্যবসায়ী, স্থপতিসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানান মন্ত্রী।

মন্ত্রী বলেন, ঢাকা শহরকে আমরা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য অবাসযোগ্য নগরীতে রূপান্তর করতে পারি না। সকল আর্থ-সামাজিক শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রয়োজন, জীবনযাত্রার উন্নয়ন ও মৌলিক বিষয়গুলো এবারের ড্যাপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে নগর পরিকল্পনাবিদ, স্থপতি, পেশাজীবী, পরিবেশবাদী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভার মেয়র এবং কাউন্সিলরসহ সকল পক্ষের সাথে মতবিনিময় করে তাদের পরামর্শ ও মতামত গ্রহণ করা হয়েছে।

এদিকে, ড্যাপের পরিকল্পনায় দেখা যায়, ২০১১-এর বিবিএস সার্ভে অনুযায়ী বর্তমানে ঢাকায় বসবাস করছেন প্রায় ১৫.৫ মিলিয়ন মানুষ।

২০৩৫ নাগাদ যা পৌঁছাতে পারে প্রায় ২৬ মিলিয়নে। পরিকল্পনায় যুক্ত রাজউকের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকার সীমানা ও ব্যাপ্তি অনুযায়ী ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ এই তিনটি সিটি করপোরেশন ও পাঁচটি পৌররসভা যুক্ত হচ্ছে। সেগুলো হলো, সাভার, তারাবো, কালীগঞ্জ(আংশিক), সোনারগাঁও (আংশিক) এবং কাঞ্চন (আংশিক)। এতে যুক্ত হবে তিন জেলার ৬৯টি ইউনিয়ন পরিষদও।

ড্যাপের সীমানা পর্যালোচনায় দেখা যায়, ড্যাপে উত্তরে সমগ্র গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকা, দক্ষিণে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এলাকা যা ধলেশ্বরী নদী দ্বারা বেষ্টিত, পশ্চিমে সাভারের বংশী নদী এবং পূর্বে কালীগঞ্জ-রূপগঞ্জ যা শীতলক্ষ্যা নদী এবং দক্ষিণপশ্চিমে কেরানীগঞ্জ দ্বারা বেষ্টিত রাখা হয়েছে। ড্যাপে ভূমি ব্যবহার প্রস্তাবনায় ১৫২৮ বর্গকিলোমিটার এলাকার মধ্যে নগর ধরা হয়েছে ৬০ শতাংশ এলাকাকে। এতে আবাসিক এলাকা ৪.৩৬ শতাংশ, মিশ্র ব্যবহার এলাকা (আবাসিক প্রধান) ৩২.৫০শতাংশ, মিশ্র ব্যবহার এলাকা (আবাসিক-বাণিজ্যিক) ০.৪৫ শতাংশ, বাণিজ্যিক এলাকা ০.১৬ শতাংশ, মিশ্র ব্যবহার এলাকা (বাণিজ্যিক প্রধান) ১.৪৩ শতাংশ, মিশ্র ব্যবহার এলাকা (শিল্প প্রধান) ৭.৯০ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক এলাকা ৪.০১ শতাংশ, ভারী শিল্প এলাকা ১.৬৩ শতাংশ, পরিবহন যোগাযোগ (বিদ্যমান) ৫.২৫ শতাংশ, পরিবহন যোগাযোগ (প্রস্তাবিত) ২.৩৫ শতাংশ, কৃষি এলাকা ২৯.২২ শতাংশ, জলাশয় ৭.৯৫ শতাংশ, বনাঞ্চল ১.৪১ শতাংশ, উন্মুক্ত স্থান ১.৩৮ শতাংশ রাখা হয়েছে।

ড্যাপের প্রকল্প পরিচালক আশরাফুল ইসলাম বলেন, আমরা ২০৩৫-এ ঢাকা কোন পর্যায়ে যেতে পারে সেটা বিবেচনা করে প্ল্যান সাজিয়েছি। কোনো এলাকায় যেন সুযোগ-সুবিধার তুলনায় অধিক জনবসতি তৈরি না হয় সেজন্য আমাদের পরিকল্পনায় রাস্তার প্রশস্তের আলোকে ভবনের উচ্চতা নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, মানুষের হেঁটে যাতায়াতের সুযোগ, নৌপথকে কাজে লাগানোর সুযোগকে আমরা বেশি প্রাধান্য দিয়েছি। পরিবেশকে প্রাধান্য দিয়ে উন্নয়নকে এবারের ড্যাপে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ যে, নির্ধারিত মূলনীতিগুলাে মাথায় রেখেই এবারেরর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। লক্ষ্যগুলাে তৈরির সময় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উচ্চপর্যায়ের নীতিমালা আর পরিকল্পনাগুলােও বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।

যেমন, জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য,পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, রাজউকের কৌশলগত পরিকল্পনা ইত্যাদি। সবশেষে পরিকল্পনার ৪টি মূল লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, এগুলো হচ্ছে:বিনিয়ােগের সর্বজনীন স্বাধীনতা, উন্নত জীবনমান, সহনশীল শহর, বাস্তুসংস্থান সংরক্ষণ ও পুনরুজ্জীবন।

সবারবাংলা/এসআই

Facebook Comments Box