জুলাই বিপ্লবীদের সরকার সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিচ্ছে না

আগস্ট বিপ্লব এমনিতেই হয়নি বরং এজন্য অনেক ত্যাগ ও কুরবানীর প্রয়োজন হয়েছে বলে জানিয়েছেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, জুলাই বিপ্লবীরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তাদেরকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিচ্ছে না। অর্জিত এ বিপ্লব ও বিপ্লবীদের যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করতে হলে জুলাই সনদকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে। কিন্তু সরকার তাদের সাথে সুবিচার করতে ব্যর্থ হয়েছে। দাবি আদায়ে তাদেরকে আবারও রাজপথে নামতে হচ্ছে। আর সে দাবি আদায়ের লক্ষ্যেই তারা জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় অবস্থান গ্রহণ করেছে। সরকার তাদের সাথে কী ধরনের আচরণ করেছে তা আমার কাছে এখনো স্পষ্ট নয়। তবে যা শোনা যাচ্ছে তাতে আমি লজ্জিত ও ব্যথিত। তিনি জুলাই বিপ্লবকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিয়ে সে সনদের ভিত্তিতে আগামীতে নির্বাচন দেওযার আহবান জানান। এ বিষয়ে কোন টালবাহানা জনগণ মেনে নেবে না। শুক্রবার রাজধানীর মিরপুর-১০-এর সেনপাড়া পর্বতা ঈদগাহ মাঠে ঢাকা-১৫ আসনের আয়োজিত এক শ্রমিক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমীরে আব্দুর রহমান মুসার সভাপতিত্বে ও ঢাকা-১৫ আসনের সদস্য সচিব ও মিরপুর পুর্ব থানার আমীর শাহ আলম তুহিনের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি লস্কর মোহম্মদ তসলিম ও ঢাকা মহনগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য ও শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন ঢাকা মহানগরী উত্তরের সভাপতি মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ। উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য শহিদুল্লাহ, শ্রমিক কল্যাণের সেক্রেটারি আতিকুর রহমান, ঢাকা উত্তরের মহানগরী কর্মপরিষদ সদস্য ও কাফরুল দক্ষিণ থানা আমীর উপাধ্যক্ষ আনোয়াররুল করিম,মহানগরী যুব বিভাগের সভাপতি ডা. মো.মঈন উদ্দিন, কাফরুল উত্তরের আমীর রেজাউল করিম মাহমুদ, কাফরুল পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত আমীর আতিক হাসান, মহানগরী মজলিসে শূরা সদস্য ও কাফরুল দক্ষিণ থানা সেক্রেটারি মু. আবু নাহিদ, কাফরুল উত্তর থানা সেক্রেটারি আশিকুর রহমান, মহানগরী যুব বিভাগের সহ-সভাপতি খান হাবিব মোস্তফা, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন কাফরুল জোন পরিচালক মিজানুর রহমান, শ্রমিক নেতা নজরুল ইসলাম প্রমূখ।

মূলত, ছাত্র, তরুণ-যুবক ও শ্রমিক সমাজের ঐক্যবদ্ধ বিপ্লবের কাছে স্বৈরাচারি শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে বিদেশে পালাতে বাধ্য হয়েছেন উল্লেখ করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, এজন্য রাজপথে অনেকেই জীবন দিয়েছেন। হাজার হাজার মানুষ আহত ও পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। অনেকে ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকুরী- বাকুরী সহ জীবন-জীবিকার অনুসঙ্গ হারিয়েছেন। ভিটে ছাড়া করা হয়েছে অনেককেই। এমনকি বিরোধী মতের লোকজনদের বাড়ীঘর ভেঙে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়ে আশ্রয়হীন করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, জুলাই বিপ্লবের এক হাজার শহীদের তালিকা আমাদের হাতে আছে। এদের মধ্যে ৬০ শতাংশই শ্রমিক শ্রেণির মানুষ। অন্যরা ৪০ শতাংশ। আবার শ্রমিকদের অধিকাংশ একেবারে প্রান্তিক শ্রেণির। মূলত, দেশ ও জাতির যেকোন ক্রান্তিকালেই শ্রমিক সমাজ সবসময় ঐতিহাসি ভূমিকা পালন করেছে। তাই দেশে ন্যায়- ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠায় শ্রমিকদেরকে যেকোন ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকবে হবে।

জুলাই বিপ্লব পূর্ব বাংলাদেশে মানুষের জানমালের কোন নিরাপত্তা ছিলো না জানিয়ে জামায়াত আমির আরো আরো বলেন, দুর্নীতি, চাঁদাবাজী, লুটপাট, অপরাধ ও জুলুমবাজীতে গোটা দেশ ছেয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু ফ্যাসিবাদের পতনের পর জনগণের মধ্যে যে আশাবাদের সৃষ্টি হয়েছিলো, অন্তর্বর্তী সরকার সে ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে। দেশে দুর্নীতি ও অনিয়ম এখনো রয়ে গেছে। সরকার জনগণকে শান্তি ও নিরাপত্তা দিতে পরেনি। তাই এ অবস্থার একটি ইতিবাচক পরিবর্তন সরকার।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, আসন্ন নির্বাচন দেশ ও জাতির ভাগ্য নির্ধারণী নির্বাচন। তাই কোন শ্রেণির ও পেশার মানুষকে ঘরে বসে থাকার সুযোগ নেই বরং সকলকে ময়দানে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। তিনি শ্রমিক সমাজকে যেকোন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকার আহবান জানান।

Facebook Comments Box