ডাকসু-জাকসু-চাকসুর প্রতিচ্ছবি জাতি আগামীতেও দেখবে

ডাকসু-জাকসু-চাকসুর প্রতিচ্ছবি আগামীতেও জাতি দেখবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, যুব সমাজ-ছাত্র শিবিরের ওপরে আস্থা রেখেছে। সব জায়গায় একই চিত্র। মেয়েদের ও তরুণদের আস্থাও ছাত্রশিবিরের ওপরে আছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুরে পুলিশ কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত ঢাকা-১৫ নির্বাচনী আসনের এক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

যুব ও নারী সমাজ ইসলামকে দারুণভাবে ধারণ করছে উল্লেখ করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ইসলামের ইতিহাসে নারীদের ভূমিকা, অবদানের কথা তুলেন বক্তব্যজুড়ে। আমরা অভিভূত হয়ে লক্ষ্য করছি, দুটো সমাজ ইসলামকে দারুণভাবে ধারণ করছে একটি আমাদের যুবসমাজ, আরেকটা আমাদের মায়েদের সমাজ।
৯১ ভাগ মুসলমানের দেশে আমাদের মায়েদের সম্মান ঘরে-বাইরে কোথাও নেই জানিয়ে জামায়াত আমির বলেন, জামায়াতে ইসলামী আল্লাহর কোরআন এবং রাসূলের জীবনী থেকে সেই শিক্ষা নিয়েছে যে আমাদের মায়ের জাতিকে মায়ের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করতে হবে। এই রাষ্ট্রে বাস্তব প্রয়োজনে এবং যোগ্যতা মোতাবেক পুরুষদের পাশাপাশি মহিলারাও রাষ্ট্র গঠনে অবদান রাখবেন।

শফিকুর রহমান বলেন, ‘ইমান, ধর্মবিশ্বাস এসবের হিসাব নেওয়ার দায়িত্ব আমাদের না। আমরা এই রাষ্ট্রের মানুষকে সম্মান করব। তারা এ দেশের নাগরিক। আমরা দেখব না সে কোন ধর্মের, কোন দলের, তার গায়ের রং কী, মুখের ভাষা কী, সে পাহাড়ে থাকে নাকি সমতলে থাকে। সে আমার ভাই, সে আমার বোন, সে এই দেশের নাগরিক সেই হিসেবে আমরা তাদেরকে হ্যান্ডেল করব।

‘আমাদের অনেকগুলো প্রায়োরিটি আছে উল্লেখ করে শফিকুর রহমান আরও বলেন, ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনস আছে। এ দেশের অর্থনীতি ভাঙাচোরা, উল্টে পড়া, ধসে যাওয়া। দুর্নীতিগ্রস্ত লোকদের হাত থেকে দেশকে উদ্ধার করে প্রকৃত সেবকদের হাতে তুলে দিতে হবে। সেই লোকটা আমাদের দলের হতে পারে, না-ও হতে পারে। সেই লোকটা মুসলমান হতে পারে, অন্য ধর্মেরও হতে পারে। যে এই দায়িত্বের জন্য উপযুক্ত, তার হাতে এই দায়িত্বের চাবি তুলে দেওয়া হবে। এমন একটা ইনক্লুসিভ, অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ আমরা গড়ে তুলতে চাই।
জামায়াত আমির বলেন, আমরা এমন একটা সমাজ চাইছি, যে সমাজের শাসকেরা মাফ চাইবে জনগণের কাছে তাদের ত্রুটি, ঘাটতির জন্য। তারা কারও কাছ থেকে অ্যাপ্রিসিয়েশন চাইবে না, বাহবা চাইবে না, কোনো স্লোগান চাইবে না, অমুক ভাই, তমুক ভাই জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ”এটা চাইবে না। তাদের অন্তর ভয়ে কাঁপবে, জনগণের এই বোঝা “আমার কাঁধে যেটা দেওয়া হয়েছে, আমি তা বহন করতে পারছি কি না”এই ভেবে।

তিনি বলেন, যে সমাজে যুব সমাজ সিদ্ধান্ত নেয়, নারীরা এগিয়ে আসে সেই সমাজ, জাতি কখনো পরিবর্তন না হয়ে পারে না। তিনি জামায়াতে ইসলামীর অঙ্গীকার তুলে ধরে বলেন, আমাদের প্রথম অঙ্গীকার, সুন্দর সুশৃঙ্খল শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলবো। শিক্ষা ভালো না হলে জাতি কখনো ভাল হতে পারে না। শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। দ্বিতীয়ত, সমাজের প্রত্যেকটি স্তরে দুর্নীতি বাসা গেঁড়ে বসে আছে। এই দুর্নীতি থাকবে না। এজন্য যতো ত্যাগ স্বীকার করতে হয় করবো ইনশাআল্লাহ। লড়াই করবো, হিমালয়ের মতো পর্বত সমান বাধাও যদি আসে দুর্নীতির অস্তিত্ব যেন আসমান থেকে মাটিতে নামিয়ে আনতে পারি। তৃতীয়ত, প্রত্যেকটি মানুষ যেন তার প্রাপ্ত হক বা ন্যায়বিচার পান সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। এজন্য যেন আবাল বৃদ্ধ, বনিতা, নারী শিশু কাউকে চেষ্টা করতে না হয়। এসময় কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন।

জামায়াত আমিরের কার্যালয়ে কানাডার হাইকমিশনার : ডা. শফিকুর রহমানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত কানাডিয়ান হাইকমিশনার অজিত শিং। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার বসুন্ধরায় আমিরের কার্যালয়ে এ সাক্ষাৎ ও প্রাতরাশ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় হাইকমিশনের পলিটিক্যাল কাউন্সিলর মি. মার্কাস ডেভিস, সিনিয়র ট্রেড কমিশনার মিস. ডেবরা বয়েস ও পলিটিক্যাল অ্যাডভাইজার মি. নিসার আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। আলোচনার শুরুতে কানাডার হাইকমিশনার জামায়াত আমিরের শারীরিক খোঁজখবর নেন এবং তার সুস্থতা কামনা করেন।

বৈঠকে বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে গণতন্ত্রের পথে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে উল্লেখ করা হয়। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্যভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে কানাডার সার্বিক সহযোগিতা ও কারিগরি সহায়তা কামনা করা হয়। এছাড়া, বাংলাদেশের টেকসই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহের স্বাধীনতা ও কার্যকর ভূমিকা নিশ্চিত করার বিষয়ে গঠনমূলক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। উভয় পক্ষ আশা প্রকাশ করেন যে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ও কানাডার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরও সম্প্রসারিত ও সুদৃঢ় হবে।

জামায়াত আমিরের সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন এবং আমিরের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মাহমুদুল হাসান।

Facebook Comments Box