অসময়ে তিস্তার ভাঙন, দিশেহারা মানুষ

কুড়িগ্রামে অসময়ে তিস্তার ভাঙনে দিশেহারা নদী তীরবর্তী মানুষ। দুয়ারে এসেছে নদী। যেকোনো মুহূর্তে বাপ-দাদার স্মৃতিমাখা বসতবাড়ী বিলিন হয়ে যেতে পারে। এজন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডে দেন-দরবার করেও প্রতিকার মিলছে না।

জেলার রাজারহাট উপজেলার ঘরিয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের গতিয়াসাম মন্ডলপাড়া গ্রামের শরাফত মাস্টারের (মৃত) ছেলে মোস্তাক আহমেদ (৫৬) হতাশা ব্যক্ত করে জানান, ‘গতবার নদী বাড়ি-ভিটা সউগ খায়া গেইল। হালের গরু বিক্রি করি নতুন বাড়ি করনু। এবারও ভাঙবের নাগছে। কামলা দিয়া খাং। এই বাড়ি গেইলে করিম কী। মোর পকেটোত বিষ খাওয়ার মতো টেকা নাই। গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে তিস্তা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় শুরু হয়েছে তীব্র নদী ভাঙন। এই তিন দিনে ভেঙেছে ৬টি বাড়ি। হুমকিতে রয়েছে আরও ৭০/৮০টি বাড়ি।

ঘরিয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের গতিয়াসাম এলাকার সাবেক মেম্বার শহিদুল ইসলাম জানান, বর্ষা আসার আগেই হঠাৎ করে ভাঙন বৃদ্ধি পাওয়ায় নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যাচ্ছে বসতবাড়ি, গাছপালাসহ আধাপাকা বোরো ধান ক্ষেত। ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি কমিউনিটি ক্লিনিক, ৮টি মসজিদ ও একটি মাদ্রাসাসহ শত শত বিঘা আবাদী জমি। বর্তমানে এই ইউনিয়নে গতিয়াসাম, রামহরি, কালিরহাট ও মেদনীপুর গ্রামে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে সহায়তা চেয়েও পাওয়া যায়নি। তারা বলছে এই মুহূর্তে তাদের কাছে কোনো বাজেট নেই।

কুড়িগ্রাম জেলার ৩টি উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে গেছে আগ্রাসি তিস্তা নদী। প্রায় ৪০ কিলোমিটার ব্যাপী এই নদীর ভাঙন বাম তীরে মাত্র ৫ কিলোমিটার জায়গা পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। বাকী ৩৫ কিলোমিটার উন্মুক্ত নদীর অনেক জায়গায় চলছে এখন ভাঙন। গত তিন দিনে বৃষ্টির ফলে তিস্তা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বিঘার পর বিঘা বোরো ধান, ফলদ ও কাঠের গাছসহ ভেঙে যাচ্ছে ইটের তৈরি পাকাবাড়ি। এখন হুমকিতে রয়েছে প্রায় ৭০ থেকে ৮০টি পরিবার। গত কয়েক বছর ধরে তিস্তার ভয়াবহ আগ্রাসনে রাজারহাটের ঘড়িয়ালডাঙ্গা ও বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের চতুরা, মন্দির, ডাংরারহাট, রামহরি, পাড়ামৌলা ও গাবুর হালান গ্রামের একাংশ নিশ্চিহ্ন করে ফেলেছে। মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে আরও গ্রামের পর গ্রাম। বসতভিটা ও জমি হারিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই না পেয়ে বুকফাটা কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে এখানকার আকাশ-বাতাস। মেগা প্রকল্পের নানান আশ্বাসের পর নদী ভাঙনের হুমকিতে থাকা মানুষ এখন জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন প্রতিরোধ প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।

রাজারহাট উপজেলার ঘরিয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল কুদ্দুছ প্রামাণিক জানান, আমার ৭ ও ৮ নং ওয়ার্ড চরম হুমকিতে রয়েছে। আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে গিয়েছি। তাদের কোনো বাজেট নেই বলে জানিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ আমাদের ভাঙন কবলিত পরিবারগুলোকে বাঁচান। নাহলে আমরা বিশাল ক্ষতিগ্রস্ত হব।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, হঠাৎ বৃষ্টির ফলে তিস্তায় অরক্ষিত এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। সমীক্ষা প্রকল্প অনুমোদন করা হলেও এখনও প্রকল্প চুড়ান্ত করা হয়নি বলে জানান এই কর্মকর্তা। জরুরি ভিত্তিতে কাজ করার সুযোগ আছে জানালেও পাউবো থেকে ভাঙন প্রতিরোধে নতুন ভাঙন কবলিত এলাকায় এখনও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু হয়নি।

Facebook Comments Box