নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাজধানীতে শিক্ষার্থীদের অবস্থান

(Last Updated On: )

সময় তখন বেলা ১১টার কিছু বেশি, হঠাৎই ১৫-২০ জন শিক্ষার্থী রামপুরা ব্রিজের একপাশে গোল হয়ে বসে পড়লেন। হাতে তাদের রঙের ডিব্বা। ব্রাশ আর রঙ দিয়ে সড়কে তারা লিখছেন ‘নিরাপদ সড়ক চাই।’ অন্যরা তখন হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে সড়কেই বসে আছেন।

শুক্রবার (৪ ফেব্রুয়ারি) এভাবেই সড়কে অবস্থান নিয়ে ১১ দফা দাবির কথা তুলে ধরলেন শিক্ষার্থীরা। এই শিক্ষার্থীদের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে লেখা, ‘বিনা শর্তে সারাদেশে বাসে শিক্ষার্থীদের হাফ পাশ দিতে হবে,’ ‘নিরাপদ সড়ক চাই, সড়কের দুর্নীতির বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলুন, লড়াই করুন, সড়কে মৃত্যুর মিছিল বন্ধ করুন,’ ‘সড়কে শৃঙ্খলা ফেরান।’

শিক্ষার্থীরা সড়কে অবস্থান নিলেও যান চলাচল স্বাভাবিকই দেখা গেছে। সেখানে আন্দোলনের বিষয়ে কথা হয় এতে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থী সোহাগী সামিয়ার সঙ্গে; যিনি সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সঙ্গে যুক্ত। তিনি বলেন, আমরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে আজ এখানে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি। ১১ দফা যৌক্তিক দাবিতে আমাদের আজকের এই আন্দোলন। স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকার কারণে বাসে বাসে আমাদের আর হাফ ভাড়া নেওয়া হচ্ছে না। স্কুল-কলেজ বন্ধ হলেও তো শিক্ষার্থীদের বাইরে বের হতে হয়, কোচিং,পড়তে যাওয়াসহ বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়। তাহলে কেন আমরা হাফ ভাড়া দিতে পারব না? আমরা রাস্তা অবোরধ করব না, বিশৃঙ্খলা করব না। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের দাবির কথা জানাতে চাই।

আন্দোলনে অংশ নেওয়া অন্যান্য শিক্ষার্থীরা বলেন, সম্প্রতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার পর আমাদের নিরাপদ সড়কের দাবি আরও জোরালোভাবে আমরা জানাচ্ছি। সড়কে আমরা কেউ নিরাপদ নই, তাই গুরুত্ব সহকারে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো খুবই জরুরি। আজকের এই আন্দোলনে আমরা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়েছি। আমরা সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে সড়কর এই সাইডে বসে আমাদের দাবিগুলোর কথা জানাচ্ছি। আমাদের আন্দোলনের কারণে কোনো রাস্তা বন্ধ হয়নি, হবেও না। আমরা আমাদের মতো করে কর্মসূচি পালন করছি, অন্যদিকে সড়কে যানবাহনগুলোও চলছে। আমারা কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করিনি।

নিরাপদ সড়ক আন্দোলন কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছেন নাদিমুর রহমান জুয়েল, শরিফ, শাকিল, মাহির, বাঁধন, শিমলা, ফরহাদ প্রমুখ।

তাদের দাবিগুলো হলো- সড়কে হত্যার শিকার নাঈম ও মাইনুদ্দিন হত্যার বিচার করতে হবে। তাদের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। গুলিস্তান ও রামপুরা ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় পথচারী পারাপারের জন্য ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করতে হবে।

সারা দেশে সব গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের হাফ পাস সরকারি প্রজ্ঞাপন দিয়ে নিশ্চিত করতে হবে। হাফ পাসের জন্য কোনো সময় বা দিন নির্ধারণ করে দেওয়া যাবে না। বর্ধিত বাস ভাড়া প্রত্যাহার করতে হবে। সব রুটে বিআরটিসির বাসের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে।

গণপরিবহনে ছাত্র-ছাত্রী এবং নারীদের অবাধ যাত্রা ও সৌজন্যমূলক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

ফিটনেস ও লাইসেন্সবিহীন গাড়ি এবং লাইসেন্সবিহীন চালক নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। গাড়ি ও ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে বিআরটিএ’র দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

সব রাস্তায় ট্রাফিক লাইট, জেব্রা ক্রসিং নিশ্চিত করাসহ জনবহুল রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যা বাড়াতে হবে। ট্রাফিক পুলিশের ঘুষ দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

বাসগুলোর মধ্যে বেপরোয়া প্রতিযোগিতা বন্ধে এক রুটে এক বাস এবং দৈনিক আয় সব পরিবহন মালিকের মধ্যে তাদের অংশ অনুযায়ী সমানভাবে বণ্টন করার নিয়ম চালু করতে হবে।

শ্রমিকদের নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র নিশ্চিত করতে হবে। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করতে হবে। চুক্তির ভিত্তিতে বাস দেওয়ার বদলে টিকিট ও কাউন্টারের ভিত্তিতে গোটা পরিবহন ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। শ্রমিকদের জন্য বিশ্রামাগার ও টয়লেটের ব্যবস্থা করতে হবে।

গাড়ি চালকের কর্মঘণ্টা একনাগাড়ে ৬ ঘণ্টার বেশি হওয়া যাবে না। প্রতিটি বাসে ২ জন চালক ও ২ জন সহকারী রাখতে হবে। পর্যাপ্ত বাস টার্মিনাল নির্মাণ করতে হবে। পরিবহন শ্রমিকদের যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।

যাত্রী-পরিবহন শ্রমিক ও সরকারের প্রতিনিধিদের মতামত নিয়ে সড়ক পরিবহন আইন সংস্কার করতে হবে এবং এর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। ট্রাক, ময়লার গাড়িসহ অন্যান্য ভারী যানবাহন চলাচলের জন্য রাত ১২টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করে দিতে হবে।

মাদকাসক্তি নিরসনে গোটা সমাজ জুড়ে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। চালক-সহকারীদের জন্য নিয়মিত ডোপ টেস্ট ও কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।

ভিন্নবার্তা/এমএসআই

Facebook Comments Box