সড়ক ও জনপথ কর্তৃপক্ষের বারবার নিষেধ করার পরেও মহাসড়কের উপর ময়লা ফেলায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১০টি ময়লাবাহী গাড়ি আটক করেছে সওজ। মঙ্গলবার রাতে অভিযান চালিয়ে ১০টি ময়লাবাহী গাড়ি আটক করেছে সওজ কর্তৃপক্ষ।
সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলে ঢাকামুখী সড়কের উপর ওই ময়লাবাহী গাড়ি থেকে বর্জ্য নিঃসরণ করা হচ্ছিল। পরবর্তীতে ময়লা ফেলবেন না বলে প্রতিজ্ঞা করায় বুধবার মুচলেকায় সেগুলো ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
সড়ক ও জনপদ বিভাগের (সওজ) নারায়ণগঞ্জের উপসহকারী প্রকৌশলী নূর এ আলম বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে বলেছেন, নাসিকের এ ময়লা ফেলার কারণে ঢাকায় প্রবেশ করার সময় সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের সব জেলার বাসিন্দাদের এ ময়লার দুর্গন্ধ নিয়ে এবং তা দেখতে দেখতে রাজধানীতে প্রবেশ করতে হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জে প্রবেশের পথে এ ধরনের ময়লা আবর্জনা বিব্রতকর। আমরা ওয়াকওয়ে, নার্সিং করেও ময়লা ফেলা থামাতে পারছি না। বারবার এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনকে জানিয়েও কোনো সুরাহা হয়নি। এবারো আবার লিখিত চিঠি পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, গত ১০ বছরে একটি ডাম্পিং স্টেশন (ময়লার ভাগাড়) তৈরি করতে ব্যর্থ হওয়ায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের শহর, বন্দর ও সিদ্ধিরগঞ্জে যত্রতত্র ময়লা ফেলছে নাসিক।
সিদ্ধিরগঞ্জের স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এখানে প্রতিদিন রাতে এসে ময়লার গাড়িগুলো ময়লা ফেলে যায়। পরে সকালে নাসিকের ময়লার ট্রাক এসে ময়লা নিয়ে যায়। তিন ট্রাক ময়লা থাকলে এক ট্রাক নিয়ে যায় বাকি ময়লা সড়কেই পড়ে থাকে। এ নিয়ে ঊর্ধ্বতন মহল থেকেও চাপ রয়েছে। বারবার বলা হলেও নাসিক একই কাজ করে আসছে। তারা বিষয়টি জানে না বললেও তাদের ময়লার গাড়ি এখানে ময়লা ফেলে।
তারা বলেন, পুরো নগরীর সড়কের পাশে একই অবস্থা। আমাদের সড়কের পাশে ময়লা যেন না ফেলা হয় সেজন্য আমরা জিরো টলারেন্সে যাচ্ছি। আমরা গাড়ি আটক করলেও পরিচ্ছন্ন কর্মীরা পালিয়ে যায়।
সেখানে ময়লা ফেলতে থাকা পরিচ্ছন্ন কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এখানে ময়লা ফেলছেন তারা। প্রতিদিন এখানে ২০-২৫টি ময়লার ভ্যানে করে সিদ্ধিরগঞ্জ অঞ্চলের ময়লা এখানে ডাম্পিং করা হয় বলে জানান তারা।
জানা যায়, সিটি করপোরেশন আমলের দীর্ঘ সময়ে সিদ্ধিরগঞ্জবাসীর ময়লা ডাম্পিং করার জন্য কোনো যায়গা নির্ধারণ করেনি নাসিক। পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জ নগরী ও বন্দর এলাকাতেও নেই কোনো ডাম্পিং ব্যবস্থা। কয়েক বছর আগে প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে ফতুল্লার পঞ্চবটিতে সিটি করপোরেশন ময়লা থেকে সার উৎপাদনের একটি প্রকল্প নির্মাণ করলেও সেটি প্রায় নিষ্ক্রিয়।
কয়েক বছর ধরে সিদ্ধিরগঞ্জের জালকুড়ি এলাকায় প্রায় ৩শ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি ডাম্পিং স্টেশন তৈরির প্রকল্প চলমান থাকলেও সেটির কাজ এখনো ২০ ভাগও সম্পন্ন হয়নি।
বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জের ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি জানান, সিদ্ধিরগঞ্জ অঞ্চলের ১০ জন কাউন্সিলর নিয়মিত মেয়রের সঙ্গে মাসিক সভায় প্রস্তাব তুললেও ময়লা অপসারণের জায়গা মেয়র দেখবেন বলে আমাদের আশ্বস্ত করেন।
সর্বশেষ মাসিক সভায় ময়লা ফেলার জন্য সিদ্ধিরগঞ্জে একটি ডাম্পিং তিনি করবেন বলে কাউন্সিলরদের জানিয়ে আপাতত ময়লা অপসারণের জন্য গাড়ি দেবেন বলে জানিয়েছিলেন।
অপরদিকে বন্দর এলাকার ওয়ার্ড কাউন্সিলর দুলাল প্রধান বলেন, ১০ বছরেও আমরা একটি ডাম্পিং স্টেশন তৈরি করতে পারিনি এটা অবশ্যই নাসিকের ব্যর্থতা। বন্দরের সব ময়লা যেখানে ফেলা হচ্ছে তার আশপাশের ২-৩ কিলোমিটারের মধ্যে মানুষ বসবাস ছেড়ে দেওয়ার উপক্রম হয়েছে।
শহরের ১৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল করিম বাবু বলেছেন, শত শত কোটি টাকার প্রকল্প নিলেও প্রধান ও অন্যতম সমস্যা ময়লা ব্যবস্থাপনা নিয়েই কোনো মাথা ব্যথা নেই নাসিকের। শুনেছি অনেক দিন ধরে প্রায় ৩শ কোটি টাকা ব্যয়ে জালকুড়িতে একটি ডাম্পিং স্টেশনের কাজ চলছে। কিন্তু কবে সেই প্রকল্প আলোর মুখ দেখবে সেটা আমি নিজেও জানি না।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে নাসিকের প্রধান নির্বাহী আবুল আমিনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বিষয়টি জানেন না বলে জানিয়েছেন।
সবারবাংলা/এসআই















