রেকর্ড সংগ্রহ রান করলেন নিউজিল্যান্ড

শুরুটা মোটেও ভালো ছিল না নিউজিল্যান্ডের। প্রথম দশ ওভারে তারা করতে পেরেছিল মাত্র ৫৭ রান। সেখান থেকে কেন উইলিয়ামসনের ঝড় তোলা ব্যাটিংয়ে শেষ দশ ওভারে ১১৫ রান যোগ করে কিউইরা। সবমিলিয়ে তাদের সংগ্রহ দাঁড়িয়েছে ৪ উইকেটে ১৭২ রান। যা কি না বিশ্বকাপ ফাইনালে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহের রেকর্ড।

রেকর্ডবুকে তোলপাড় করা ইনিংসে উইলিয়ামসন করেছেন ৪৮ বলে ৮৫ রান। অথচ তিনি আউট হতে পারতেন মাত্র ২১ রানেই। তার ক্যাচ ছেড়ে দেওয়ার কড়া মাশুল গুনতে হয়েছে অস্ট্রেলিয়াকে। ফলে এখন প্রথমবারের মতো শিরোপা জিততে তাদের করতে হবে ১৭৩ রান।

দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে নিউজিল্যান্ডকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ। ব্যাটিংয়ে নেমে মিচেল স্টার্কের করা ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ইতিবাচক শুরুর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন কিউই ওপেনার গাপটিল।

কিন্তু পাওয়ার প্লে’তে সে তুলনায় রান তুলতে পারেনি নিউজিল্যান্ড। প্রথম ওভারের মতো দ্বিতীয় ওভারেও আসে একটি বাউন্ডারি। তৃতীয় ওভারের প্রথম বলে ইনিংসের প্রথম ছক্কা হাঁকান সেমিফাইনালে কিউইদের জয়ের নায়ক মিচেল।

গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের করা সেই ওভারেই জীবন পান গাপটিল। তৃতীয় বলে তার ব্যাটের নিচের কানায় লেগেছিল বল। কিন্তু সেটি গ্লাভসে রাখতে পারেননি অস্ট্রেলিয়ার উইকেটরক্ষক ম্যাথু ওয়েড। ফলে ব্যক্তিগত ১০ রানে জীবন পেয়ে যান গাপটিল।

তবে গাপটিলের ক্যাচ ছাড়লেও মিচেলকে ফেরাতে ভুল করেননি ওয়েড। ইনিংসের চতুর্থ ওভারের পঞ্চম বলটি লেগ কাটার করেছিলেন জশ হ্যাজলউড। বলের গতি ব্যবহার করে লেট কাটের মতো খেলেন মিচেল। কিন্তু তার ব্যাটের কানায় লেগে বল চলে যায় ওয়েডের গ্লাভসে। ফলে সমাপ্তি ঘটে ৮ বলে ১১ রানের ইনিংসের।

মিচেলের বিদায়ের পর উইকেটে আসেন অধিনায়ক উইলিয়ামসন। প্রথম চার ওভারে ২৮ থেকে পরের দুই ওভারে কিউইদের স্কোরবোর্ডে যোগ হয় মাত্র ৫ রান। পাওয়ার প্লের শেষ দুই ওভারে দারুণ বোলিং করে নিউজিল্যান্ডকে আটকে রেখেছেন অসি বোলাররা।

প্রথম উইকেটের সেই ধাক্কা টানা চার ওভার পর্যন্ত সইতে হয়েছে নিউজিল্যান্ড। ইনিংসের পঞ্চম থেকে অষ্টম ওভার পর্যন্ত কোনো বাউন্ডারিই হয়নি। আট ওভার শেষে তাদের স্কোর দাঁড়ায় ১ উইকেটে মাত্র ৪১ রান। উইলিয়ামসন তখন অপরাজিত ১২ বলে ৬ রানে আর গাপটিল খেলছিলেন ২৮ বলে ২২ রান নিয়ে।

সেখান থেকে নবম ওভারে জোড়া বাউন্ডারি হাঁকিয়ে রান রেট কিছুটা বাড়িয়ে নেন উইলিয়ামসন। সেই ওভারেই পূরণ হয় কিউইদের দলীয় পঞ্চাশ। অ্যাডাম জাম্পার করা দশম ওভারে ছয়টি সিঙ্গেল নিলে স্কোর দাঁড়ায় ১ উইকেটে ৫৭ রান।

ইনিংসের মাঝপথ পেরিয়ে যাওয়ার পরই যেন সম্বিৎ ফেরে উইলিয়ামসনের। মিচেল স্টার্কের করা ১১তম ওভারে পরপর তিন চারের মারে তুলে নেন ১৯ রান। স্টার্কের এই ওভারে উল্টো বিদায়ঘণ্টা বাজতে পারতো উইলিয়ামসনের। কিন্তু চতুর্থ বলে ক্যাচ ছেড়ে দেন হ্যাজলউড। ফলে ২১ রানে জীবন পেয়ে যান উইলিয়ামসন।

অ্যাডাম জাম্পার করা পরের ওভারে মার্টিন গাপটিল আউট হন ৩৫ বলে মাত্র ২৫ রান করে। তবে পথ হারাননি উইলিয়ামসন। ম্যাক্সওয়েলের করা ১৩তম ওভারে ব্যাক টু ব্যাক ছক্কার মারে তুলে নেন ১৬ রান। সেই ওভারে ডিপ মিড উইকেট দিয়ে হাঁকানো দ্বিতীয় ছক্কায় মাত্র ৩২ বলে ফিফটি পূরণ হয় কিউই অধিনায়কের।

আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এটি তার ১৪তম ফিফটি। শুধু তাই নয়, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে তার ৩২ বলের ফিফটিই দ্রুততম। এর আগে বিশ্বকাপ ফাইনালে আর কেউ এর চেয়ে দ্রুত পঞ্চাশ করতে পারেননি।

অধিনায়কের দেখাদেখি হাত খুলে মারতে শুরু করেন চার নম্বরে নামা গ্লেন ফিলিপসও। জাম্পার করা ১৫তম ওভারে একটি করে চার-ছক্কার মারে নিয়ে নেন ১২ রান। স্টার্কের করা পরের ওভারে রীতিমতো তাণ্ডব চালান উইলিয়ামসন। চারটি চার ও এক ছয়ের মারে নিয়ে নেন ২২ রান।

এই ওভারে হাঁকানো ছক্কাটির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ২ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন উইলিয়ামসন। পাশাপাশি একই ওভারে বিশ্বকাপ ফাইনালে অধিনায়কদের মধ্যে সর্বোচ্চ ইনিংসের রেকর্ডও নিজের করে নেন কিউই দলপতি।

নিজের প্রথম ওভারে ৯ রান দেওয়ার পর দ্বিতীয় ওভারে ১৯ রান দেন স্টার্ক। আর ১৬তম ওভারে ২২ রান খরচ করার মাধ্যমে মাত্র তিন ওভারেই ৫০ রান দিয়ে বসেন অস্ট্রেলিয়ার স্ট্রাইক বোলার। যা বাড়িয়ে দেয় অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চের চিন্তা।

ইনিংসের ১৬ ওভারের মধ্যে স্টার্কের করা প্রথম তিন ওভারে উইলিয়ামসন মোকাবিলা করেন ১২টি বল। যেখানে সাত চার ও একটি ছক্কা হাঁকান উইলিয়ামসন। যা কি না বিশ্বকাপের এক ম্যাচে নির্দিষ্ট কোনো বোলারের বিপক্ষে সর্বোচ্চ বাউন্ডারি হাঁকানোর রেকর্ড।

স্টার্কের দেদারসে রান বিলানোর ধারাটা খানিক চেপে ধরেন অন্য দুই পেসার প্যাট কামিনস ও জশ হ্যাজলউড। কামিনসের করা ১৭তম ওভারে আসে মাত্র ৮ রান। পরের ওভারে ৫ রান দিয়ে উইলিয়ামসন ও ফিলিপসকে সাজঘরে পাঠান হ্যাজলউড।

আউট হওয়ার আগে ১০ চার ও তিন ছয়ের মারে ৪৮ বলে ৮৫ রান করেন উইলিয়ামসন। যা কি না বিশ্বকাপ ফাইনালে যৌথভাবে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহের রেকর্ড। এর আগে ২০১৬ বিশ্বকাপের ফাইনালেও ঠিক ৮৫ রান করেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটার মারলন স্যামুয়েলস।

অন্যদিকে ফিলিপসের ব্যাট থেকে আসে ১৮ রান। এ দুজনের তৃতীয় উইকেট জুটির সংগ্রহ মাত্র ৬.২ ওভারে ৬৮ রান। ফিলিপস-উইলিয়ামসন ফিরে যাওয়ার পর শেষ দুই ওভারে আসে ২৩ রান। জিমি নিশাম ৭ বলে ১৩ এবং টিম সেইফার্ট করেন ৬ বলে ৮ রান।

সবারবাংলা/এসআই

Facebook Comments Box