র‌্যাব-পুলিশ পরিচয়ে মহাসড়কে ডাকাতি করে তারা

(Last Updated On: )

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয় লেখা কটি, হ্যান্ডকাফ, ওয়াকিটকি। কখনও র‌্যাব আবার কখনও ডিবি পুলিশ। দেখে বোঝার উপায় নেই তারা আসল নাকি নকল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে মহাসড়কে ডাকাতি করাই তাদের নেশা ও পেশা। একের পর এক অপতৎরতা চালানোর পর অবশেষে ময়মনসিংহ জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) হাতে ধরা পড়েছে চক্রটির তিন সদস্য। এরপর বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর এসব নানা তথ্য।

শনিবার নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন জেলা পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূঁঞা।

তিনি জানান, জেলার নান্দাইল উপজেলার দেওয়ানগঞ্জ বাজারে ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট শাখা পরিচালনা করছিলেন গফরগাঁও উপজেলার চর মছলন্দ গ্রামের ব্যবসায়ী সাদ্দাম হোসেন। তিন বছর ধরে নিজের এজেন্ট শাখার জন্য প্রতি সপ্তাহে টাকা নিতে যেতেন ইসলামী ব্যাংকের ভালুকা শাখায়। গত ৮ অক্টোবর ব্যাংক থেকে ১৬ লাখ টাকা তুলে নান্দাইল যাবার পথে গফরগাঁওয়ে ডিবি পরিচয়ে ডাকাত দল হাতকড়া পড়িয়ে তুলে নিয়ে যায় সাদ্দামকে। পরে প্রায় আড়াই ঘণ্টা ঘুরিয়ে টাকা ও দুটি ফোন লুট করে গাজীপুরের কালিয়াকৈর এলাকায় রাস্তার পাশে ফেলে যায়। এ ঘটনায় সাদ্দাম হোসেন গফরগাঁও থানায় একটি মামলা করেন। ঘটনাটি ডিবি পুলিশ তদন্তে নেমে প্রযুক্তির সহায়তায় শুক্রবার গাজীপুর ও ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায়।

অভিযানে গাজীপুর সদর থেকে আনোয়ার হোসেনকে (৩৯) গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার কোনাবাড়ি গ্রামের মোস্তফা মোল্লার ছেলে এবং গাজীপুর সদরে ভাড়া বাসা নিয়ে বসবাস করতেন। তাকে ধরার পর সাভারের ব্যাংক টাউন এলাকা থেকে ডাকাতির পরিকল্পনাকারী লিটন কাজী ওরফে দেলোয়ার কাজীকে (৪০) গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি গ্রামের ঠাকুর নওপাড়া গ্রামের মোতালেব কাজীর ছেলে এবং সাভারে ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করতেন। আশুলিয়া থেকে আরেক সদস্য মো. রুবেল মিয়াকে (৩২) গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি গোপালগঞ্জ সদরের চরবড়ফা গ্রামের আজাদ মিয়ার ছেলে। তাদের কাছ থেকে ৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা, একটি হ্যান্ডকাফ, একটি ওয়াকিটকি ও দুটি ডিবি পুলিশ লেখা জ্যাকেট উদ্ধার করা হয়।

তাদের জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানায়, চক্রটি গাজীপুর ও সাভার এলাকায় নিজেদের আস্তানা গেঁড়েছে। মহাসড়ক কেন্দ্রীক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয় দিয়ে তারা ডাকাতি করতো। ২০২০ সাল থেকে ডাকাতি করছিল চক্রটি। ঘটনার দিন সকালে গাজীপুর চৌরাস্তায় বসে লিটন, আনোয়ার ও রুবেলসহ পলাতক আসামি সিরাজ, আরিফ, পলান, রফিক, বাবু, সালাম, শহীদসহ মোট ১০ জন ইসলামী ব্যাংক ভালুকা শাখা থেকে বের হওয়া গ্রাহকের টাকা ডাকাতি করার পরিকল্পনা করে। সেই অনুযায়ী ব্যাংক থেকে নজরদারি করে ডাকাতরা মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকার যোগে সাদ্দামকে বহনকারী সিএনজিকে অনুসরণ করে গফরগাঁও উপজেলার শান্তিগঞ্জ এলাকায় গিয়ে গতিরোধ করে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে তুলে নিয়ে যায়। পরে মারধর করে কালিয়াকৈর এলাকায় নিয়ে সাদ্দামকে হাতে প্লাস্টিকের ক্লিপ ও চোখে গামছা বাঁধা অবস্থায় রাস্তার পাশে ফেলে দিয়ে চলে যায়। তবে ঘটনার সঙ্গে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কোনো সম্পৃক্ততা পায়নি পুলিশ।

পুলিশ সুপার আরও জানান, চক্রটি ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভালুকার জামিরদিয়া এমএল ডাইংয়ের সামনে থেকে সম্প্রতি র‌্যাব পরিচয়ে শুভান আলী শুভর কাছ থেকে সাড়ে ৭ লাখ টাকা, একই সড়কের হবিরবাড়ি সীডস্টোর বাদশা গ্রুপের কামাল ইয়ার্ণ লিমিটেডের সামনে থেকে র‌্যাব পরিচয়ে কানাই চন্দ্র বর্মনের ৫ লাখ টাকা ডাকাতি করে। তারাও ব্যবসায়ী ছিলেন।

গ্রেপ্তার হওয়া লিটন ডাকাত দলটির প্রধান। তার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় ১০টির বেশি ডাকাতি, দস্যুতা ও মাদকের মামলা রয়েছে। রুবেলের বিরুদ্ধেও দুটি ডাকাতির মামলা রয়েছে। পরে বিকেলে তিন ডাকাতকে আদালতে তোলা হলে আনোয়ার ও রুবেল স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। লিটনকে সাত দিনের রিমান্ডের জন্য আবেদন করে পুলিশ। তবে তার রিমান্ড শুনানি হয়নি।

পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মেদ ভূঁঞা বলেন, ব্যাংক ও মহাসড়কের চলাচলকারী যানবাহনকে তারা টার্গেট করে ডাকাতির ঘটনাগুলো ঘটাতো। ডাকাতিই তাদের নেশা ও পেশা। মানুষের সন্দেহ এড়াতে তারা পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলাবাহিনী পরিচয় দিয়ে ডাকাতি করতো। যার করণে তাদের শনাক্ত করাটা চ্যালেঞ্জের ছিল।

Facebook Comments Box