পাঁচ দফা দাবিতে সিলেট বিভাগে অনির্দিষ্টকালের সর্বাত্মক পরিবহন ধর্মঘট শুরুর ১২ ঘণ্টার মাথায় স্থগিতের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। দিনভর দুর্ভোগের পর রাত সাড়ে নয়টার দিকে ধর্মঘটের স্থগিতের ঘোষণা দেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের নেতারা।
সোমবার (২২ নভেম্বর) রাতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন সিলেট বিভাগীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবু সরকার এতথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, সিলেট বিভাগীয় কমিশনার ড. মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে পরিবহন শ্রমিক নেতাদের বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে। বৈঠকে বিভাগীয় কমিশনার আমাদের ন্যায্য দাবিদাওয়া মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আগামী বছরের ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সিলেট বিভাগজুড়ে চলা ধর্মঘট স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এই সময়ের মধ্যে আমাদের দাবি পুরণ না হলে আবারও সর্বাত্মক পরিবহন ধর্মঘট শুরু হবে।
এর আগে সোমবার (২২ নভেম্বর) সিলেটে সিটি করপোরেশন কর্তৃক পরিবহন শ্রমিকদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার, ছাতক পৌরসভার নামে ট্রাক প্রতি ৪৫০ টাকা চাঁদা আদায় বন্ধসহ পাঁচ দফা দাবিতে সিলেট বিভাগের চার জেলা সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও সিলেটে ‘সর্বাত্মক পরিবহন ধর্মঘট’ শুরু হয়।
ধর্মঘটের কারণে সকাল থেকে বন্ধ ছিল সব ধরনের যান চলাচল। যাত্রীবাহী যানবাহনের পাশাপাশি পণ্যবাহী যানবাহনও বন্ধ ছিল। সিলেটের বিভিন্ন সড়কে আড়াআড়ি ভাবে ট্রাক ও লড়ি রেখে ধর্মঘট সফলে পিকেটিং করেন শ্রমিকরা। এ কারণে সাধারণ যাত্রী সাধারণের পাশাপাশি বিপাকে পড়েন প্রাইভেট গাড়ি নিয়ে বের হওয়া সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীরা।
সিলেট জেলা বাস মিনিবাস কোচ মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়ন (রেজি নং: বি-১৪১৮) নেতাদের বিরুদ্ধে সিটি করপোরেশনের দায়ের করা মামলাসমূহ প্রত্যাহার, মেয়াদ উত্তীর্ণ শেরপুর, শেওলা, লামাকাজী, শাহপরাণ ও ফেঞ্চুগঞ্জ সেতু থেকে টোল আদায় বন্ধ এবং চৌহাট্টাসহ নগরের বিভিন্ন স্থানে কার, মাইক্রোবাস, লেগুনা, সিএনজিচালিত অটোরিকশসহ সকল প্রকার গাড়ির পার্কিং ব্যবস্থা করা। এছাড়া ট্রাফিক পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশের সকল প্রকার হয়রানি বন্ধ, সিলেট জেলা অটোটেম্পু, অটোরিকশাচালক শ্রমিক জোট (রেজি নং: ২০৯৭)-এর ত্রি-বার্ষিক নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা, ও ‘বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়’ ঘোষিত কমিটি বাতিল করা ও মনোনয়ন ফি বাবত আদায় করা সব টাকা ফেরত প্রদান, সিলেটের আঞ্চলিক শ্রম দফতরের উপপরিচালককে প্রত্যাহার এই পাঁচ দফা দাবি গতকাল রোববার এই ধর্মঘটের ডাক দেয় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন সিলেট । তাদের এই কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে ট্রাক-মাক্রোবাস মালিক শ্রমিক সংগঠনগুলো।
এর আগে ডিজেলের মুল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে গত ৫ নভেম্বর থেকে টানা ৭২ ঘণ্টার ধর্মঘট পালন করেন সিলেটের পরিবহন মালিক শ্রমিকরা। শ্রমিকদের ঘন ঘন ধর্মঘট ডাকায় দুর্ভোগে পড়া যাত্রীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি নগরের চৌহাট্টায় অবৈধ মাইক্রোবাস স্ট্যান্ড উচ্ছেদ নিয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে পরিবহন শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এই সংঘর্ষে সিসিক ও পুলিশের পক্ষ থেকে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়। পরিববহন শ্রমিকদের ধর্মঘট ও কঠোর কর্মসূচির আল্টিমেটামের প্রেক্ষিতে পরিবহন শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে সিসিক মেয়রের একটি সমঝোতা বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে পরিবহন শ্রমিক নেতাদের সিসিকের পাঁচ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদান ও মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়।
সেই অনুযায়ী সিসিকের পক্ষ থেকে পরিবহন শ্রমিক নেতাদেরকে পাঁচ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। কিন্তু সময়মতো আপসনামা প্রস্তুত না হওয়ায় আটজনের বিরুদ্ধে সিসিকের মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। ফলে ভেস্তে যায় আপোসের উদ্যোগ। এ সময়ের মধ্য পরোয়ানাভুক্ত আসামিরা আদালতে হাজির না হওয়ায় সম্প্রতি তাদের সম্পদ ক্রোকের নির্দেশ দেন আদালত।
সবারবাংলা/এসআই